
ছিন্ন ফ্রেম, বিঘ্ন দিন, কিছু মুহূর্ত
মুক্তির সেই আনন্দটা আবার নতুন করে বুঝেছিলাম, এক বৃহস্পতিবার রাতে শুভদার সঙ্গে কথাবার্তা চলাকালীন।
কতদিন ধরেই না বলি ঘুরতে যাব, ছবি তুলব — কিন্তু হয়ে ওঠে না।
কাজের ফাঁকে সেদিন বেরিয়েছিলাম — যেন খাঁচার পাখির মুক্তির আনন্দ।
আসলে শুভদার সঙ্গে বাইরে বেরোলেই মনে হয়, যেন একটু মুক্তি পেলাম। যদিও সে এক অন্য গল্প, পরে বলব।
নেচে উঠল মনটা। মনে মনে একটা গল্প বুনে ফেললাম।
সে গল্পে ছিল পরিচয়, উত্তরণ, পতন এবং শেষমেশ এক প্রশান্তি।
একটি ছবি-ভরা গল্প।
আলো-আঁধারে আঁকা কিছু মুহূর্ত।
ভেবেই রেখেছিলাম—একটা পুরোনো কাঠের ট্রামের গুনগুনে চলাচল,
কলকাতার ভেজা রাস্তায় তার ছায়া, বৃষ্টির পর জমা জলে প্রতিফলিত শহর,
আর আমার ক্যামেরা সে মুহূর্তগুলো ধরে রাখবে — এক নিঃশব্দ বিরতি, জীবনযুদ্ধের ক্লান্ত শরীরে একটু থেমে নিঃশ্বাস নেওয়া।
কিন্তু জীবনের মজাটাই বোধহয় ওর অনিশ্চয়তা।
সেদিনও তার ব্যতিক্রম হল না।
সকালটা শুরু হল নীরব এক বিঘ্নতা দিয়ে।
ক্যামেরার চার্জার কাজ করছিল না — সারাক্ষণ ঝিকিমিকি করতে থাকা লাল আলো যেন আমাকে সাবধান করছিল।
দুটো ব্যাটারির একটায় ছিল ৭০%, অন্যটায় মাত্র ৩০% চার্জ।
ঠিক যেন আমারই অবস্থা — ব্যাটারির মতোই আধা-ভরা জীবনীশক্তি।
কোন চার্জারই ঠিকভাবে কাজ করছিল না।
তবু বেরিয়ে পড়লাম।
ভাবলাম, যতটুকু সম্ভব।
কিন্তু বৃষ্টি? কোথায়!
চারপাশে কেবল উষ্ণ বাতাস আর একরাশ সূর্য।
আকাশ যেন আমাদের ঠকাল।
আবহাওয়ার পূর্বাভাস বলেছিল বৃষ্টি হবে — ভেবেছিলাম, জমা জল, ভিজে ট্রামলাইন, নরম আলো।
কিন্তু না — না ছিল বৃষ্টি, না সজল রাস্তাঘাট — কেবল ঝাঁ চকচকে রোদ্দুর আর একরাশ নির্লিপ্ততা।
যাই হোক, ভাবলাম ট্রামে তো উঠবই — কিছুটা ছবি ধরার চেষ্টা করা যাক।
আধা ঘণ্টা অপেক্ষা করে এল… এসি ট্রাম!
নীরব, ঠান্ডা, প্রাণহীন।
জানলার বাইরে মুখ বের করা যায় না।
কী যন্ত্রণা!
আমরা আরাম খুঁজছিলাম না, খুঁজছিলাম গল্প।
কিন্তু এই ট্রামের সঙ্গে আমাদের সেই গল্পের কোনও মিল নেই।
অগত্যা, সেই প্রথম পাত্র-পাত্রীর মত আমি আর ট্রাম — দুজনেই গুটিয়ে রইলাম।
তবু জীবন কখনও খালি হাতে ফেরায় না।
অনেক কিছু না পেলেও, শুভদার হাত ধরে পেলাম কিছু নতুন পথ —
চিত্তদা’র দোকান, ডেকার্স লেনের বিকেল, বিকেলের মনুমেন্ট, সন্ধ্যার ইডেন গার্ডেন্সের ঝলক।
শিক্ষকদের লড়াইয়ের প্রাঙ্গণ — যদিও ক্যামেরা তুলতে পারিনি, কিন্তু মনে গেঁথে গিয়েছিল।
মনে মনে কুর্নিশ জানালাম তাদের।
শহীদ মিনারের পাদদেশে আজও সমাজের ভার কাঁধে নিয়ে বসে আছেন কেউ কেউ।
কি অদ্ভুত দৃশ্য!
সেদিন পরিকল্পনার কিছুই পূর্ণ হয়নি।
তবুও, দিনটা একেবারে ফাঁকা যায়নি।
যেসব ছবি তুলতে চেয়েছিলাম, তার একটাও তুলতে পারিনি।
তবে কিছু মুহূর্ত ঠিক ধরা পড়ে গেছে:
ক্যামেরার চার্জার — যার অকার্যকর ঝলকানিতে আমার পরিকল্পনার শুরুতেই ছেদ পড়েছিল।
এসি ট্রামের নিস্তব্ধ ভিতর — গতি আছে, গন্তব্য নেই।
অনাকাঙ্ক্ষিত রোদ্দুর — প্রকৃতি যেন বলল, “তোমার আবেগ আমার সমস্যা নয়।”
ফেরার পথে হাঁটতে হাঁটতে ঘামে ভেজা রাস্তা — কাঁধে ক্যামেরা, কিন্তু সবচেয়ে ভারী ছিল নিজের ভাবনাগুলো।
দিনের শেখা কথা:
সব ছবি ক্যামেরা দিয়ে তোলা যায় না।
কিছু ছবি জন্ম নেয় প্রত্যাশা আর বাস্তবতার মাঝখানে।
এটা ছিল এমনই এক গল্প — যেখানে থামার চেষ্টাটাও একটা যাত্রা।
না, হয়তো প্রদর্শনীর জন্য নয়।
তবে মনে রাখার মতো একটা দিন — নিজের ভেতর ফিরে দেখার মতো।
Get Curated Photography Update in Your Mailbox
Join our mailing list to get regular photography updates (not more than 5 in a month).
Thank you for subscribing.
Something went wrong.
We respect your privacy and take protecting it seriously